নতুন বছরে কক্সবাজার বায়তুশ শরফের তিন উপহার

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১০:৪৩

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মাহফিলে ইছালে ছওয়াব উপলক্ষ্যে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে দোয়া করেন বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন।

ইমাম খাইর, সিবিএন:
মাহফিলে ইছালে ছওয়াবকে সামনে রেখে নতুন বছর ২০১৮ উপলক্ষ্যে কক্সবাজারবাসীকে তিনটি মহামূল্যবান উপহার দিয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্নিক প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স। উপহারসমূহ হলো- বায়তুশ শরফ ত্রিরত্ন গণপাঠাগার, শাহ কুতুবউদ্দিন আদর্শ মাদরাসা ও বায়তুশ শরফ ত্রিরত্ন মেধাবৃত্তি। বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ-এর অধীনে এসব পরিচালিত হবে। বায়তুশ শরফ ‘ত্রিরত্ন গণপাঠাগার’ পাঠকদের জন্য সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। যেখানে পাঠকরা পাবে বিশ্বের নামকরা সব ধরণের বই। থাকবে সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইসলামের সাধক, দার্শনিকদের দূলর্ভ সব ধরণের বই। ‘ত্রিরত্ন গণপাঠাগার’ সব শ্রেনী পেশার মানুষের জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সমাজে সুযোগ বঞ্চিত অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে ঝরে পড়ে। শিক্ষার সুযোগ পায়না। সামান্য সুযোগ পেলে অদম্য মেধাবীরা উন্নত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবে। ‘ত্রিরতœ মেধাবৃত্তি’ দেয়া হবে সমাজের এসব বঞ্চিত, গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের।

শাহ কুতুবউদ্দিন আদর্শ মাদরাসা হবে আলেম ও ইসলামিক স্কলার তৈরীর কারখানা। সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে আল্লাহকে জানা ও তার সৃষ্টিতত্ত্ব এবং ইহকাল-পরকাল সম্পর্কে বোঝাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি অবিচল বিশ্বাস গড়ে তুলা এবং ইসলামের মর্মবানী অনুধাবনের পাশাপাশি জীবনধারণ সংক্রান্ত জ্ঞান লাভের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আলেম সৃষ্টির প্রত্যয়ে শাহ কুতুবউদ্দিন আদর্শ মাদরাসার যাত্রা। ২০১৮ সালের জানুয়ারী থেকে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত চালু করা হবে। প্রতি শ্রেনীতে ভর্তি নেয়া হবে ন্যুনতম ৫০ জন ছাত্র/ছাত্রী।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে বায়তুশ শরফ ত্রিরত্ন গণপাঠাগার কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স এর মহাপরিচালক স্বর্ণপদক জয়ী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব এমএম সিরাজুল ইসলাম। আজ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী মাহফিলে ইছালে ছওয়াব উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বায়তুশ শরফ।

সভায় প্রধান আকর্ষণ ছিলেন পীর বাহারুল উলুম মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (ম.জি.আ)। এতে তিনি সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডক্টর আহসান উল্লাহ (আহসান সাঈদ)। উপস্থিত ছিলেন- প্রবীন আলেমে দ্বীন আলহাজ্ব মাওলানা তাহেরুল ইসলাম, বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম কামাল।

সভায় সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমএম সিরাজুল ইসলাম জানান, বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী স্মরণে আজ শুক্রুবার সকাল ৭ টা থেকে ইছালে ছওয়াব মাহফিলের কার্যক্রম আরম্ভ হবে। শনিবার বাদে ফজর আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।

ত্রিরতœ বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স এর মহাপরিচালক বলেন, বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা মহান আধ্যাত্নিক সাধক মরহুম শাহ মীর মুহাম্মদ আখতর (রাহ.), মরহুম পীরে কামেল শাহ সুফী আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (রাহ.) এবং বর্তমান পীর বাহারুল উলুম মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (ম.জি.আ) এই তিন ব্যক্তি সত্যিই রত্ন। তাদের জীবনাদর্শ অনাগত ভবিষ্যতের কাছে স্মৃতিময় করে রাখতে ‘ত্রিরত্ন গণপাঠাগার’ ও ‘ত্রিরত্ন মেধাবৃত্তি’ প্রচলন করা হয়েছে। বর্তমান বায়তুশ শরফের সফল কান্ডারী বাহারুল ইলুম শাহ সুফি মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিনের অবদান ও কর্মশক্তিকে স্মরণীয় করতে শাহ কুতুবউদ্দিন আদর্শ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বায়তুশ শরফ একটি অধ্যাত্নিক, ধর্মীয়, শিক্ষা ও মানবসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় ও মানবসেবামূলক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে রয়েছে জেলার বৃহত্তম জামে মসজিদ, এতিম শিক্ষা ও পুনর্বাসনকেন্দ্র, হেফজখানা (কুরআন চর্চাকেন্দ্র), চক্ষু হাসপাতাল, বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ধর্মীয় আধ্যইত্নকতা ও জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষা, মানবকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে বায়তুশ শরফ। এটি দেশের অন্যতম সনামধন্য প্রতিষ্ঠান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মরহুম হযরত কেবলার ইচ্ছা ছিল- কক্সবাজারে গাউছে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ‘ফাতেহায়ে ইয়াজ দাহুম’ তথা মাহফিলে ইছালে ছওয়াব আয়োজন করা। হযরত কেবলার ইন্তেকালের পর তারই যোগ্য উত্তরসুরী মরহুম হুজুর কেবলা মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (রহ) ১৯৭১ সালের অক্টোবরে বায়তুশ শরফের গোড়াপত্তন করেন। ১৯৭৩ সালে অলিকুল শিরোমনি হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) স্মরণে কক্সবাজারে প্রথম ‘ফাতেহায়ে ইয়াজ দাহুম’ প্রচলন করেন। বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদের সফল কান্ডারী মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিনের দক্ষ পরিচালনায় এখনো সেই মাহফিল অব্যাহত আছে।